রোজ সকালের মত কালুর আজকের সকালটা ব্যতিক্রম নয়। ঘুম থেকে উঠে কয়েকটা পোড়া আলু আর এক গামলা জল খেয়ে কালুকে রওনা হতে হয় সারেং বিলে। কালুর মামা পরিমল দাস এই সিজনে সারেং বিলে বোরো ধান লাগায়। বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা খুবই কম থাকায় ক্ষেতের আইল ধরে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। গেল মাসে মুন্সি পাড়ার ক্ষেতের আলু একাই তোলতে হয়েছিলো কালুকে। এবার মনে হচ্ছে সারেং বিলের আইলও একাই কাটতে হবে। তবে কালুর কোনোরকম ক্লান্তি আসে না। এ অভ্যাস সেই ছোটবেলা থেকেই। সারেং বিল পার হলেই গ্রামের স্কুল। সাদা কালো পোশাক পড়ে স্কুলে যাচ্ছে কালুর বয়সী ছেলেরা। কালু তাকিয়ে থাকে, মনে ভিতর কেমন জানি হু হু করে কালুর। আবার আনমনে গান ধরে আইল কাটা শুরু করে। দুপুর গড়িয়ে আসলো, কালুকে বাড়ি ফিরতে হবে। মামি বলে দিয়েছে, আসার সময় বিলের পাশে হাওর থেকে শাপলা তুলে আনতে। দুই আটি শাপলা কাঁধে নিয়ে কালু হাঁটছে, সকল ক্লান্তিকে পেছনে ফেলে। স্কুলের সামনে এসে আনমনে থমকে দাঁড়ায় কালু। ঢাকা থেকে বাবুরা এসেছেন মাতবর সাহবের সাথে কি জানি কথা বলছে। তৈয়বের দোকানে এসে জানা গেলো এইবার স্কুলের মাঠে বৈশাখী মেলা বসবে। অনেকদিন পর মনের ভিতর কেমন জানি খুশীর ভাব দেখা দিল কালুর। জম্ম থেকে মায়ের মুখ দেখেনি কালু। মামার টানাপোড়া সংসারে থেকে খুশী কি জিনিস কালু ভুলে গিয়েছিল। কালু এও জানে না কে তার বাবা আর কে তার মা। জেলেপাড়ার রতনের বড় ভাই কালুকে একদিন বলেছিল “ওর মা নাকি অনেক বছর আগে এক মুসলমানের হাতধরে পালিয়ে গিয়েছে”। শুনে কালুর ভেতরটা কষ্টের ফেটে গিয়েছিল। অবশ্য কালুর মামা কালুকে জানিয়েছে ওর মা কলকাতায় থাকে। এও বলেছিল যে, “আসছে জ্যৈষ্ঠ মাসে কালুর মা কলকাতা থেকে কালুর সাথে দেখা করতে আসবে”। কালুর আনন্দটা তাই এইবার দ্বিগুণ। কারণ খুব শীঘ্রই মায়ের সাথে দেখা হবে তার উপর কয়দিন পরে গ্রামে মেলা হবে। বিকাল না গড়াতেই কালু চলে যায় কুমার বাড়িতে। কুমার বাড়িতেও আনন্দের ঢল। এবার নিজেদের গ্রামে মেলা হবে তাই নানা রঙের পুতুল, খেলনা, হাড়ি-পাতিল আর মাটির গয়না বানানোর কথাই চলছে। কালুও এই আনন্দের ভাগীদার, কারণ কুমারদের বড় কাজ থাকলে মাটি কেটে এনে দেয় কালু। আর সেই সুবাদে মেলার আগেই কালুর হাতে কিছু টাকা থাকবে । নিরঞ্জন কুমারের সাথে সেরকম কথাই হলো কালুর। রাতে কালুর ঘুম আসে না। কবে আসবে মেলা, কবে দেখা পাবে মায়ের। এরই মাঝে কালু চিন্তা করে ফেলেছে এবারের মাটি কাটার টাকা মামার হাতে দিবে না। মায়ের জন্য কিছু একটা কিনবে মেলা থেকে। আলু রাখার ঘরে এপাশ ওপাশ করে রাত কাটে কালুর। ধান লাগানো শেষ, এখন কালুর তেমন কোন কাজ নেই। কুমার বাড়িতে মাটি দেয়ার কাজ শেষ। সামনের সপ্তাহ থেকে মেলা শুরু। কালুর স্বপ্নের দিন শুরু হয়ে যাচ্ছে। স্কুলের সামনের বড় রাস্তার দুপাশ জুড়ে মেলার ফটক। মাঠের একপাশে নাগরদোলা বসানো হয়েছে। নানা রকমের দোকানিরা রঙ বেরং এর তাতেঁর শাড়ি, গামছা, নকশী কাঁথার পশরা বসিয়েছে। আরেক পাশে হরেক রকমের মাটির খেলনা, ঘর সাজানোর আসবাবপত্র, মেয়েদের কসমেটিক ও গয়নার এর দোকানিরা। এর মাঝে বাহারি খাবারের দোকানও রয়েছে। আর রাতের বেলা স্কুলের সামনের খালি জায়গাতে যাত্রা পালা হবে। সবাই বলছে এবার ঢাকা থেকে আসা অনেক বড় বড় শিল্পীরা পালা-গান ও অভিনয় করবে। কালু ঘুড়ে ঘুড়ে মেলা দেখছে। একবার মনে হয় নাগরদোলায় উঠবে, আবার চিন্তা করে টাকা নষ্ট করে ফেললে মায়ের জন্য কিছু কিনা হবে না। রকমারি খাবার দেখেও আবার পিছ পা হয়ে যায়। মায়ের জন্য কি কিনবে খুঁজে পাচ্ছে না। অবশেষে একটা সবুজ রঙের তাঁতের শাড়ি ২৮৫ টাকায় পেলো। কালু জানেনা এটা মায়ের সাথে মানাবে কি না। কারণ সে কখনো মাকে দেখেনি। তবুও অনেক খুশী মনে কিনল শাড়ীটি। নাগরদোলায় আর উঠা হলো না। তবুও কেমন জানি একটা আত্নতৃপ্তিবোধ করছে কালু। মেলার বাইরের ফটক থেকে ১০ টাকা দিয়ে হাওয়াই মিঠাই কিনলো। রাস্তায় মানুষের ভিড় পার হয়ে হাওয়াই মিঠাই খেতে খেতে আর গান গাইতে গাইতে হাটা ধরলো কালু। তৈয়বের দোকানের সামনে এসে মামাকে দেখে কালু একটু থমকে দাঁড়ালো, বুকের ভেতর ধুক ধুক করা শুরু হলো। আবার একটু সাহস নিয়ে সামনে এগুলো। তৈয়বের দোকান পার হয়ে প্রধান সড়ক দিয়ে বাড়ির দিকে দ্রুত হাটা শুরু করল কালু। হঠাৎ কানে চিন চিন শব্দ, মুহূর্তের মাঝে অচেতন হয়ে গেল কালুর দেহ। পাশ কাটিয়ে গেল মাল বোঝাই একটি ট্রাক। আর রক্তে রঞ্জিত রাস্তার একপাশে রইলো কালুর মায়ের জন্য কেনা প্যাকেটে মোড়া সবুজ শাড়ীটি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নামহীন
লেখাটা বাস্তব থেকে নেয়া!! কোন গল্প নয়। সুতরাং বদলানোর সাহস আমার হয়নি। মাহাতাব রশীদ (অতুল) ভাই উৎসাহীত করার জন্য ধন্যবাদ। সবাইকে কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
ছায়া মানবী শুক্লা
গল্পের শেষ অংশ খুবই কষ্টের ........এক আকস্মিক কষ্ট ..........এভাবে শেষ করাটা ভালো লাগেনি .......তারপর ও লেখা ভালই ........ভোট দিলাম .........আরো লিখুন ..........:)
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।